বান্দরবান::
ঈদের ছুটি কাটাতে পর্যটকদের ঢল নেমেছে পাহাড়, ঝর্না আর মেঘের শহর বান্দরবানে। তবে গত কয়েক বছরের চেয়ে এ বছর পর্যটকদের আগমন বেশি বলে জানালেন পর্যটন ব্যবসা সংশ্লিষ্টরা।
শনিবার (১০ জুলাই) জেলা সদরের মেঘলা, নীলাচল, শৈল প্রপাত, চিম্বুক, নীলগিরিসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
ঈদের ছুটি কাটাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের পদচারণায় বান্দরবানের পর্যটন স্পটগুলো পরিণত হয়েছে জনসমুদ্রে। ফলে পর্যটন শিল্পের ওপর নির্ভরশীলরা বর্ষায় পর্যটক না আশার হতাশা কিছুটা কাটিয়ে উঠেছেন। কয়েকমাস আগেও বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছিল পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো।
চট্টগ্রাম থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক ইখতিয়ার, রায়ান, কক্সবাজার থেকে আসা পর্যটক শোয়াইবরা জানান, এ বছর ঈদের ছুটিতে পাহাড়ের শহর বান্দরবানে ঘুরতে এসে খুবই ভালো লাগছে। বিশেষ করে বর্ষায় পাহাড়ের দৃশ্য অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর।
বান্দরবানের শৈলপ্রপাতের হস্তশিল্প পণ্য ব্যবসায়ী দৌলিয়ান বম বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে সম্প্রতি জেলায় তেমন পর্যটক না আসায় ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। এখন কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে। বর্ষায় বৃষ্টি কম থাকলে আশা করি এ মৌসুমটাতে অনেকটা ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যাবে।’
বান্দরবানের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র শৈলপ্রপাতের স্থানীয় বম সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষরা নিজেদের হাতে বোনা বিভিন্ন তাঁত বস্ত্র ও ঘর সাজানোর পণ্য বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। কিন্তু এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে বৃষ্টির কারণে পর্যটকদের আগমন ঘটেনি। তাই বেশ কয়েকটি ব্যবসায় লাভের দেখা মেলেনি এখানকার পর্যটনকেন্দ্রিক স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের।
বান্দরবানের শৈলপ্রপাত ছাড়াও মিলনছড়ি, চিম্বুক, নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে গড়ে উঠেছে স্থানীয় আদিবাসী বম সম্প্রদায়ের হাতে তৈরি বিভিন্ন তৈজসপত্রের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে শৈলপ্রপাতের প্রায় শতাধিক পরিবারের জীবিকা নির্বাহে গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখে এ হস্তশিল্প ব্যবসা।
এ বিষয়ে স্থানীয় লুসাই সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতা লালচুংনুং লুসাই বলেন, এখানকার বাসিন্দারা মূলত পর্যটন শিল্পকে পুঁজি করে জীবিকা নির্বাহ করে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি পর্যটক আসায় অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লাভবান হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে পর্যটন এর সাথে সংশ্লিষ্টরা লাভবান হবেন।
বান্দরবানের হলিডে ইন রিসোর্টের পরিচালক জাকির হোসেন এবং স্বর্ণশিলা আবাসিক হোটেলের পরিচালক মানিক চৌধুরী জানান, প্রতি বছর ঈদের মৌসুমে আমাদের অনেক ব্যস্ততা থাকে। কিন্তু এ বছর বর্ষা মৌসুমে ঈদ অনুষ্ঠিত হওয়ায় আমাদের লোকসান গুণতে হয়েছে। এতদিন আমরা অপেক্ষা করছিলাম ঈদের সময়টাতে ব্যবসায় কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসবে। তবে ঈদের পরদিন থেকে পর্যটকের আগমন ঘটেছে এবং ব্যবসায়ও মোটামুটি ভালো হচ্ছে।
পরিবহন ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম জানান, প্রতি বছর সময়টাতে পর্যটকদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। কিন্তু এ বছর টানা বৃষ্টি আর হঠাৎ বন্যা পরিস্থিতির কারণে পর্যটকদের আগমন কমে গেছে। তবে ঈদের পরদিন থেকে প্রচুর পর্যটক এসেছে বান্দরবানে। বর্ষার তেমন প্রভাব না থাকলে ব্যবসা লাভজনক হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক জানান, পর্যটকদের আগমনকে কেন্দ্র করে পর্যটনস্পটগুলোকে নতুন সাজে সজ্জিত করা হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বেশ কয়েকটি পর্যটন স্পটে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।