নিজস্ব প্রতিনিধি :: সীতাকুণ্ডে কৃষক লীগ নেতা ইউসুফের মৃত্যুর ঘটনা তাদের পরিবারের দুই সহোদরের মধ্যে জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে। তার মৃত্যু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। সেখানে বিএনপির কোন অংগ সংগঠনের নেতা জড়িত নয়। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বেলা ১২ টায় সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে সীতাকুণ্ড উপজেলা বিএনপি’র পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ১৬ নভেম্বর ২০২৪ ইং তারিখে সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে প্রবাসী হেলালের সাথে জায়গা জমির বিরোধে উপজেলা কৃষক লীগের নেতা মীর ইউসুফ নিহতের ঘটনায় সীতাকুণ্ড থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের পরিবার। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বিএনপি নেতা হেলাল (ঘটনার পর বিদেশে পলাতক) ও সালাউদ্দিন সহ ছয় সাতজন মিলে কৃষক লীগ নেতা মীর ইউসুফকে কিল, ঘুষি মেরে কাঁদা মাটিতে লুটিয়ে ফেলে। আহত অবস্থায় পরিবারের লোকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর মামলা পরবর্তী ময়নাতদন্তের রিপোর্টে হত্যার আলামত পাওয়া গেছে বলে পুলিশের বরাত দিয়ে কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় নিউজ ছাপানো হয়েছে। এই ঘটনায় সীতাকুণ্ড উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলনে তীব্র প্রতিবাদ জানায়।
বিএনপি নেতৃবৃন্দ দাবি করেন, আপন দুই সহোদর ভাইয়ের মধ্যে জায়াগা বিক্রয় ও বিক্রয়কৃত জায়াগার সীমানা নির্ধারণ করে ক্রেতাকে (প্রবাসী হেলাল) বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয় নিয়ে বিরোধের জের ধরে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ও ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হয়। মীর ইউসুফ উক্ত ঝগড়ার প্রায় এক ঘন্টা পর বাড়িতে গিয়ে গোসল করে পরবর্তীতে শরীর খারাপ লাগছে বলে স্টোক করে। তাৎক্ষনিক ওনাকে একটি স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। তখন পরিবারের সদস্যরা স্বাভাবিক মৃত্যু ধরে লাশ বাসায় নিয়ে আসে। পরবর্তীতে আওয়ামী দোসরদের ইন্ধনে ঘটনাটিকে রাজনৈতিকভাবে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ ও স্থানীয় সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামীলীগ নামক ফেসবুক পেইজ থেকে কৃষক লীগ নেতা মীর ইউসুফকে বিএনপি নেতাকর্মীরা হত্যা করেছে বলে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন অপপ্রচারে লিপ্ত হয়। ঘটনার পরের দিন মিথ্যা ও হয়রানি মূলক মামলা করার লক্ষ্যে মৃত লাশটি পোস্টমর্টেম করে ৫ আগস্ট এর পূর্ববর্তী অতীতের ন্যায় নীরহ বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানি করার লক্ষ্যে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।
বিএনপি নেতৃবৃন্দের বলেন, আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, কোনরূপ প্রাথমিক তদন্ত না করে সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ আওয়ামী দোসরদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে উক্ত মিথ্যা মামলা থানায় এজাহার হিসেবে এন্ট্রি করেন। তারই ধারাবাহিকতায় উক্ত মিথ্যা মামলা দায়ের ও বিএনপি নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারী আওয়ামীকর্তৃক মিথ্যা অপপ্রচারের বিরুদ্ধে বিগত ১৯-১১-২০২৪ তারিখে স্থানীয় বিএনপির পক্ষ থেকে একটি প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলেন, তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোত্তম সহযোগিতা করে আসছে। কিন্তু আপনারা শুনে আশ্চর্য হবেন যে উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে মামলা হয়েছে সে মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য স্বৈরাচারী আওয়ামী দোসরদের যোগসাযোগে অত্র মামলার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট ম্যানুপ্যালেট করার ষড়যন্ত্রের কথা আমরা শুনতে পাচ্ছি। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তাহলে আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এবং এইসব ষড়যন্ত্রের কুশীলবদের তদন্ত-পূর্বক চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
তারা আরো বলেন, আপনারা জানেন সচরাচর হত্যা মামলার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আসতে দীর্ঘদিন সময় লাগলেও রহস্যজনকভাবে অত্র মামলার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট নাকি অদৃশ্য শক্তির ইশারায় ১০-১৫ দিনের মধ্যে ম্যানেজ করা হয়েছে এ থেকে বুঝা যায়, ৫ আগস্ট এর খুনি স্বৈরাচারী হাসিনা পালিয়ে গেলেও প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এখনো তাদের ঘি খাওয়া দোসররা রয়ে গেছে। যারা বিএনপিকে বিতর্কিত করতে এবং দেশকে অস্থিতিশীল করে রাখতে তাদের পালিয়ে যাওয়া নেত্রীর নির্দেশে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তারা বলেন, এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অত্র মামলাসহ বিএনপি ও দেশের বিরুদ্ধে যারা এখনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন তাদেরকে হুঁশিয়ারি করে বলে দিতে চাই, অবিলম্বে আপনারা এসব ষড়যন্ত্র বন্ধ করুন; না হয় বাংলাদেশের জনগণ আপনাদেরকে যেখানেই থাকেন না কেন আপনাদের টেনে হিছড়ে বের করে কঠোর বিচারের আওতায় নিয়ে আসবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সীতাকুণ্ড উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ডাঃ কমল কদর, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব কাজী মহিউদ্দিন, উত্তর জেলা সেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মো: মোরসালিন, সোনাইছড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুর উদ্দিন মোঃ জাহাঙ্গীর চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ-দৌলা ও বিভিন্ন ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ প্রমুখ।