বিশেষ প্রতিনিধি :: সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী এলাকার চাষী শিবলু প্রতিবছর শুধু রমজান মাসেই পুদিনা বিক্রি করে লাখ লাখ আয় করেন। কিন্তু এবার অনেক টাকা লাভ তো দূরের কথা লোকসানের আশংকায় উদ্বিগ্ন তিনি। তাই অনেক পরিশ্রমে গড়ে তোলা সবুজ ক্ষেতের দিকে তাকালে তার বুকের ভেতরে কেমন যেন হু হু করে উঠে। শিবলু ভাটিয়ারী ইউনিয়নের খাদিমপাড়া গ্রামের ফরিদুল আলমের ছেলে।
কঠোর পরিশ্রমী কৃষক শিবলুর সাথে আলাপকালে জানা যায়, বাণিজ্যিকভাবে পুদিনা চাষ করে তাকে কখনো লোকসানের শিকার হতে হয়নি। প্রতিবছর ৪-৫ লাখ টাকার পুদিনা বিক্রি করেন তিনি। এবারও রমজানে বিপুল পরিমাণ পুদিনা বিক্রির লক্ষে ৯০ শতক জমিতে পুদিনার চাষ করেন। বাজার দর ভালো হলে অতীতের মতই কয়েক লাখ টাকা লাভ হবে-এমনটাই ছিলো তার আশা। কিন্তু আকস্মিক করোনা ঝড়ে সারা বিশ্বের মতই লণ্ডভণ্ড বাংলাদেশের প্রভাব এসে পড়েছে প্রত্যন্ত গ্রামের এই চাষির ছোট্ট জমিতেও। এবার আগের মত চাহিদা নেই তার পুদিনার। পুরো মাসটা গেলেই বোঝা যাবে কত টাকার পুদিনা বিক্রি হলো। ন্যায্য দাম পেলে লাভ হবে বলেই মনে করেন তিনি। আর তা না হলে ভেঙে যাবে স্বপ্ন।
এদিকে এ অবস্থা শুধু কৃষক শিবলুর নয়, উপজেলার শতাধিক পুদিনা চাষির সবারই আশংকা রয়েছে এবারের লাভ নিয়ে। সে কথাই জানালেন ভাটিয়ারী এলাকার দায়িত্বে থাকা সীতাকুণ্ড কৃষি অফিসের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা ঝন্টু কুমার নাথ। তিনি বলেন, উপজেলার মোট পুদিনার অর্ধেকের মতই চাষ হয় ভাটিয়ারী-মাদামবিবিরহাট এলাকায়। এখানে অন্তত ৬ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিক ভাবে পুদিনার চাষ করেছেন ৪০/৫০ জন কৃষক। প্রতি বছর বিশেষ করে রমজান মাসকে সামনে রেখেই পুদিনা চাষ করে থাকেন তারা। এসময় লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করেন। পুদিনার ফলন বৃদ্ধিতে আমি সরেজমিনে ক্ষেতগুলো ঘুরে দেখি এবং তাদেরকে পরামর্শ দিয়ে আসছি। তিনি বলেন, এটি খুব উপকারী একটি ঔষধি গাছ।
কফ সর্দি জ্বর ও কুষ্ঠ রোগের জন্য পুদিনা পাতা উপকারী। এছাড়া পুদিনা পাতা সেদ্ধ করে বেটে মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে উপকার হয়। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি অঙিড্যান্ট থাকে, যা ক্যান্সার, হৃদরোগসহ আরো ভয়ংঙ্কর রোগ থেকে মানুষকে বাঁচাতে পারে। এ পাতায় ব্যবহারে গলার ক্ষত প্রতিরোধ করে, দাঁত ও মাড়ির ক্ষত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। এছাড়া পুদিনার চা শরীরের নির্দিষ্ট অংশের উপর কাজ করতে পারে এবং শ্বাসতন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী। অনেক রকম গুণের এই পুদিনা কিন্তু কৃষকরা চাষ করেন লাখ লাখ টাকা আয়ের আশায়। কিন্তু এবারে করোনার উপদ্রব ও লকডাউনে বাজারগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চাহিদা কিছুটা কম মনে হচ্ছে। এ কারণে লোকসান হতে পারে এমন আশংকায় রয়েছেন তারা।
সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি অফিসার আল মামুন রাসেল বলেন, পুদিনা পাতার গুণাগুণ বলে শেষ করা যাবেনা। বহুল প্রাচীনকাল থেকেই পুদিনা পাতার ব্যবহার করে চলেছে মানুষ। বর্তমানে কৃষক পুদিনা পাতা চাষে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি প্রচুর কর্মসংস্থানেরও সুযোগ হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মোট ১৫ হেক্টর জায়গায় ১০৫ কৃষক ঔষধি উদ্ভিদ পুদিনা পাতার চাষ করেছেন। সারাবছর পুদিনার চাষ হলেও বিশেষ করে রমজানে পুদিনার চাহিদা বেশি হওয়ায় কৃষকরা এ মৌসুমে পুদিনা বেশি চাষ করেন। প্রতি বছর এখান থেকে পুদিনা ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় নিয়ে যায় আগত পাইকারী ব্যবসায়ীরা। এবার লকডাউনের ফলে বাইরের পাইকাররা আসতে পারছেন না। এ কারণে চাষিরা কিছুটা দুশ্চিন্তায় আছেন বলে জানান তিনি।