বগুড়া ডেস্ক::
দেশের অন্যতম বৃহৎ দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের জনহিতকর কোনো কর্মসূচি চোখে পড়ে না বগুড়ায়। দুই দলেই অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর বিরোধ চলছে সমান তালে।
সম্মেলনের পর গত দেড় বছরেওে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি জেলা আওয়ামী লীগের। আর দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়ায় বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা একেবারেই নাজুক। তৃণমূল পর্যায়ের হাজার-হাজার নেতাকর্মী মামলার জালে বন্দী হয়ে এখন ফেরারী। জেলা পর্যায়ের কিছু নেতা পুলিশ আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে লিঁয়াজো করে আরাম আয়েশে দিন পার কারছেন।
বিএনপি: দলের প্রতিষ্ঠাতার জন্মস্থান হওয়ার কারণে বগুড়া বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু বর্তমানে সেই ঘাঁটিতেই দলের নাজুক অবস্থা। দলে বহু বিভক্তির কারণে সাংগঠনিক অবস্থাও নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে দীর্ঘদিন তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখা গেছে জেলা বিএনপি কার্যালয়। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করতে কার্যালয়ের সামনে হাতে গোনা কিছু নেতাকর্মীকে সমবেত হতে দেখা যায়। তাও আবার পুলিশের সঙ্গে সমঝোতা করে।
সূত্রমতে, জেলা বিএনপির অন্তত দুই হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে মামলা হয়েছে। সেসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে অনেক নেতা-কর্মীকে। মামলা মাথায় নিয়ে এখনো এলাকাছাড়া শত-শত নেতাকর্মী।
২০০৫ সালে তৃণমূলের ভোটে বগুড়া জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হলেও ২০১১ সালে এসে কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেয়া হয় তিন সদস্যের জেলা কমিটি। যে কমিটির সভাপতি হলেন ভিপি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন আর সাংগঠনিক সম্পাদক মীর শাহে আলম। এ কমিটি ঘোষণার পর থেকেই সভাপতি একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে থাকেন।
দলীয় সূত্রমতে, পরবর্তীতে জেলা সভাপতি পছন্দের লোকজন নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করেন। তবে তার কর্মকাণ্ডে নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। যদিও লন্ডনে অবস্থান করা দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে মর্মে প্রচার-প্রচারণা থাকায় মুখ খোলার সাহস পায় না অনেকেই।
দলের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, বগুড়া জেলা বিএনপির নাজুক অবস্থার জন্য দলীয় কোন্দলই দায়ী। জেলা সভাপতির একচ্ছত্র আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ এবং ত্যাগী নেতাদের কোণঠাসা করে রাখার কারণেই বিকশিত হতে পারছে না দলটি।
ত্যাগী নেতাকর্মীদের অভিযোগের তীর জেলা দলের শীর্ষ তিন নেতার দিকেই। তারা দাবি করছেন, আন্দোলনের সময় মাঠের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এতো মামলা হলেও সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের বিরুদ্ধে কোনোই মামলা হয়নি। ক্ষমতাসীন দল ও প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতা করে তারা বহাল তবিয়তেই আছেন।
বগুড়া জেলা বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাফতুন আহম্মেদ খান রুবেল বলেন, ‘বগুড়া বিএনপির ঘাঁটি। কিন্তু বর্তমান সরকার দেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। জনগণের বাক স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। এ কারণে মনে করা হচ্ছে, বগুড়ায় বিএনপির জনসমর্থন কমেছে।’
মাফতুন আহম্মেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি এমন হয়েছে নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে এলেই তাদের গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। যে কারণে দলীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের আনাগোনা কমেছে।’
আওয়ামী লীগ: ২০১৪ সালের ১০ ডিসেম্বর বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। সম্মেলনে বিশৃঙ্খলা এড়াতে কেন্দ্রের নেতারা কাউন্সিলরদের ভোট না নিয়ে সভাপতি পদে আলহাজ্ব মমতাজ উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক পদে মজিবর রহমান মজনু এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে (০১) রাগেবুল আহসান রিপু, (০২) টি জামান নিকেতা ও (০৩) মঞ্জুরুল আলম মোহনের নাম ঘোষণা করেন। ওই ঘোষণার প্রায় ১০ মাস পর জেলা থেকে একটি খসড়া পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা পাঠানো হয় কেন্দ্রে। সেটাও পার হয়েছে ৮ মাস। এরপরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হয়নি আজও। ফলে দলীয় কর্মসূচিতে অনেক নেতাকে আর আগের মতো দেখা যায় না। জেলা কার্যালয়েও অনেকে আসা-যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। এছাড়াও নানা কারণে দলের মধ্যে প্রকাশ্য বিরোধ রয়েছে। এতে নাজুক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগে।
এদিকে, পূর্ণাঙ্গ নতুন কমিটি ঘোষণা না হওয়ায় ত্যাগী ও সিনিয়র নেতাদের কোনো পদ-পদবী নেই। তারা কোনো ফোরামে গিয়েই পরিচয় দিতে পারেন না। শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দিতে হয় বলে কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকেন না অনেকেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাবেক কয়েকজন নেতা বাংলামেইলকে জানান, সম্মেলনের পর ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ১৮ মাসেও তা হয়নি। অনেকে প্রস্তাবিত কমিটির পদ ব্যবহার করছেন গায়ের জোরে। বিভিন্ন কর্মসূচিতে সাবেক নেতাদের সঙ্গে এমন আচরণ করা হয় যে, ঘোষিত ৫ জন ছাড়া অন্যরা দলের কেউ নয়। সকলেই সাধারণ কর্মী। এ কারণেই সিনিয়র অনেক নেতাই কর্মসূচিতে অংশ নেন না।
বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক টি জামান নিকেতা বলেন, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। সবাইকে নিয়ে পুর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া তৈরি করে সেটা অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। খুব শিগগিরই কেন্দ্র থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করা হবে।