ফিচার ডেস্ক::
নাম রহমা হারুন। জন্ম নাইজেরিয়ার কানোতে। অন্য আর দশটা তরুণীর মতো তার চোখেও অনেক স্বপ্ন। নিজের পায়ে ভর করে পৃথিবী দেখার স্বপ্ন তার। চোখের সামনে তার বয়সী মেয়েদের হাঁটতে দেখে কান্নায় চোখ ভিজে আসে তার। কিন্তু ঈশ্বরের যেন অন্যরকম ইচ্ছে। তাই এমন রহস্যময় জীবন দান করেছে তাকে। আর যার কারণে দিনের বেশিরভাগ সময় তাকে কাটাতে হয় প্লাস্টিকের একটি ছোট পাত্রের মধ্যে। ছোটবেলায় আর দশটা স্বাভাবিক বাচ্চার মতো জন্মগ্রহন করলেও ছয় মাস বয়স থেকে আর স্বাভাবিক বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পেটের নীচের অংশটা তার নেই বললেই চলে। অসহ্য যন্ত্রনা নিয়ে অন্যের বোঝা হয়ে বেঁচে আছেন, কেবল শ্বাসটুকু চলছে বলে।
রহমার মায়ের ভাষ্যমতে, ‘ছোটবেলায় আমার মেয়ে আর দশজন বাচ্চার মতোই ছিল। কিন্তু ছয় মাস বয়সে যখন তার হামাগুড়ির দেয়ার কথা তখন সে নড়তে চড়তে পারত না। এই অবস্থায় তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা এর কোন সমাধান দিতে পারে না। যতই দিন যায় ততই তার দেহে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। বর্তমানে তার বয়স ১৯ বছর।’ এদিকে রহমার বাবা একজন কৃষক। এই মেয়ে ছাড়াও আর দুটি সন্তান আছে তার। মেয়েকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য এমন কোন জায়গা বাকি রাখেনি তিনি। কিন্তু কোথাও কোন আশার আলো দেখতে পাননি তিনি। তার ভাষ্যমতে, ‘আমার জমিজমা যা ছিল সব আমি বিক্রি করে দিয়েছি কিন্তু কোথাও আমার মেয়ের জন্য চিকিৎসা পাইনি। এই পর্যন্ত আমি আমার মেয়ের জন্য একলাখ নায়রা(কেনিয়ার মুদ্রা) ব্যায় করে ফেলেছি। শুধুমাত্র ঈশ্বরই জানেন আমার মেয়ের সুস্থ হওয়ার আসল মূল্য কি যা আমি খরচ করলে তাকে সুস্থ করে তুলতে পারবো।’
মেয়েকে কেন প্লাস্টিকের পাত্রে রাখা হয় এমন প্রশ্ন করলে রহমার মা জানায়, বহনের সুবিধার জন্যই তাকে এই পাত্রে রাখা হয়। এছাড়া তার ছোট ভাই বোনও তাদের বোনকে দেখাশোনার কাজ করে। তবে আত্মীয় স্বজনরা তাকে কখনো তাচ্ছিল্যের চোখে দেখে না বরং সে বেড়াতে গেলে তারা অনেক খুশী হয়। এদিকে ডাক্তারি চিকিৎসা ব্যর্থ হওয়ায় পাড়া প্রতিবেশিরা বলে তাকে শক্তিশালী জিন ধরেছে। তাই তাকে কেউ সুস্থ করে তুলতে পারছে না। এদিকে রহমার কথা স্থানীয় একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে অনেকেই রহমাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছে। ইতোমধ্যে একজন সাংবাদিক তাকে একটি হুইলচেয়ারও কিনে দিয়েছেন। এখন তাকে ছোট প্লাস্টিকের পাত্রে বসিয়ে ছোট ভাইবোনদের ঘুরে বেড়াতে কষ্ট হয় না। এদিকে রহমার কাছে তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে চাইলে সে জানায়, ‘আমার একটি দোকান দেয়ার ইচ্ছে আছে, যেখানে মানুষ কিনতে আসবে এবং আমি তাদের তাই দিব যা তারা চায়।’