BREAKING NEWS - W.P.L.O.C.K.E.R...C.O.M
Search

করোনায় সীতাকুণ্ডে জাহাজভাঙা শিল্প ক্ষতির সম্মুখীন ; চাই সরকারী প্রণোদনা

মীর মোঃ দিদারুল হোসেন টুটুল :: সীতাকুণ্ডে বিশ্ব ব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সরকারী প্রণোদনা না পেলে শিপ ইয়ার্ড মালিকরা বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশংকা রয়েছে। অপরদিকে শিপ ইয়ার্ডগুলো বন্ধ হয়ে গেলে লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপনের মুখে পড়বে বলে অভিজ্ঞ মহল ধারনা করছে। ফলে করোনাভাইরাসের প্রভাব ও আগাম করের কারণে ডুবতে বসেছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের জাহাজভাঙা শিল্প। নতুন ভ্যাট আইন অনুযায়ী জাহাজ আমদানির ক্ষেত্রে আগাম কর (অ্যাডভান্স ট্যাক্স) ধার্য করায় জাহাজ অস্বাভাবিকভাবে আমদানি কমে গেছে। আর করোনাভাইরাসের কারণে গত প্রায় দেড় মাস ধরে শিপইয়ার্ডগুলোতে জাহাজ ভাঙার কাজও প্রায় বন্ধ রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে এ শিল্পে কর্মরত হাজার হাজার শ্রমিক বেকার। এ অবস্থায় সরকারের কাছে নীতি সহায়তা চেয়েছেন জাহাজভাঙা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ)।

সংগঠনটির কর্মকর্তারা বলছেন, ‘জাহাজভাঙা শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে প্রণোদনা নয়; সরকারের নীতি সহায়তা প্রয়োজন। আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিল্প মন্ত্রণালয় আগাম কর প্রত্যাহারের যে সুপারিশ করেছে তা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগে জাহাজ আমদানির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আগাম কর দিতে হতো না। প্রতি টনে ৩০০ টাকা হারে ভ্যাট পরিশোধ করতে হতো। কিন্তু নতুন ভ্যাট আইনে এ শিল্পে জাহাজের মোট মূল্যের ৫ শতাংশ আগাম কর আরোপ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, জাহাজ আমদানির সময়ই এই কর প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ৬ মাসের মধ্যে এই আগাম কর সমন্বয় ও ফেরত প্রদানের কথা। এ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যবসায়ী বলছেন, নতুন ভ্যাট আইন প্রণয়ন হওয়ার পর থেকে যেসব জাহাজ আমদানি হয়েছে এর বিপরীতে সরকারকে যে আগাম কর দিয়েছেন শিল্প মালিকরা এর মধ্য থেকে ২৩৮ কোটি টাকা ফেরত পাওয়ার কথা। কিন্তু নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও এক কানাকড়িও তারা ফেরত পাননি। এ কারণে কমছে জাহাজ আমদানি। এ খাতে সরাসরিভাবে যুক্ত অন্তত ৫০ হাজার শ্রমিক বেকার হওয়ার পথে। ব্যবসায়ীরা ব্যাংক ঋণের সুদ ও আগাম করের বোঝা নিয়ে একপ্রকার অসহায় হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থা ৩০ এপ্রিল শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আফরোজা বেগম স্বাক্ষরিত চিঠিতে জাহাজভাঙা শিল্পে আগাম কর প্রত্যাহার সংক্রান্ত একটি সুপারিশ প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

সরেজমিনে ঘুরে ও বিভিন্ন শিপইয়ার্ড মালিকদের কাছ থেকে জানা যায়, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের কারণে প্রত্যেকটি দেশের সরকার দেশের আভ্যন্তরে সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লকডাউন করে বন্ধ করে দেয়। আর আমাদের দেশের সরকারও এই প্রাদূর্ভাব মহামারি থেকে জাতিকে বাঁচানোর জন্য সর্বক্ষেত্রে সব কিছু লক ডাউন করে দেয়। পাশাপাশি সরকার শিল্প খাত যাতে ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সেজন্য ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষনা করে। কিন্তু সবচেয়ে বেশী ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া শিপ ইয়ার্ড মালিকরা এক্ষেত্রে ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ শিল্পের জন্য কোন সাড়া শব্দ পাচ্ছে না বিধায় তারা এখন দুঃশ্চিন্তার মধ্যে আছে।

এদিকে বিশ্ববাজার লক ডাউনের ফলে সীতাকুণ্ডে শিপ ইয়ার্ডে স্ক্র্যাপ লোহার দাম কমে যায়। এছাড়া লক ডাউনের কারণে অঘোষিতভাবে কাঁচামালসমূহ আন্তর্জাতিক বাজারদর পতনের ফলে মজুদ কাঁচামাল সমূহের বিশাল অংকের ক্ষতি বিদ্যমান। তার উপরে আন্তর্জাতিক বাজার ও স্হানীয় বাজারে স্ক্র্যাপ লোহার চাহিদা না থাকায় প্রতি টন স্ক্র্যাপ লোহার দাম ১২০ ডলার কমে যাওয়ায় তার প্রভাব স্হানীয় বাজারে পড়ে। এ শিল্পের কাঁচামাল লক ডাউনের আগে প্রতিটন স্ক্র্যাপ লোহা ৪০/৪১ হাজার টাকা বিক্রি হতো।সেখানে এ মহামারির কারণে বর্তমানে স্ক্র্যাপ লোহার দাম প্রতিটন ৩০/৩২ হাজার টাকায় নেমে আসে। এমনিতে সীতাকুণ্ডসহ সারা দেশ লক ডাউনের কবলে পড়ায় প্রায় রোলিং মিল কারখানা গুলো বন্ধ। এতে করে শিপ ইয়ার্ডে স্ক্র্যাপ লোহা বিক্রি বন্ধ হলেও ব্যাংক গুলো সুদ নেয়া বন্ধ করেনি। শিপ ইয়ার্ডের শ্রমিকদের বেতন দেয়া, গ্যাসের মিনিমাম চার্জ, বিদ্যুৎ বিলের মিনিমাম চার্জ এবং ব্যাংক ঝণের সুদ বহন করতে হয়।কারখানার আয় চলমান না থাকলে যে কারো পক্ষে ঐ খাত সমূহে ব্যয় করা খুবই কঠিন।

তাই সবকিছু মিলিয়ে সীতাকুণ্ডের শিপইয়ার্ড মালিকরাসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি ও সংকটের মুখে পড়বে। তাই এ সংকটাপন্ন অবস্হা থেকে উত্তরণের জন্য শিপ স্ক্র্যাপ লোহা ব্যবসায়ীরাসহ অন্যান্য রোলিং মিল মালিক ও শিপ ইয়ার্ড মালিকদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা জরুরী ভিত্তিতে ছাড়ের প্রাণের দাবী। এমতাবস্থায় নতুন ভাবে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি করতে না পারলে সব শ্রণির বযবসায়ীরা ঋণখেলাপি হয়ে যাবে এবং এ শিল্পে কর্মরত লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে যাবে। আর এতে করে সামাজিক অস্হিরতাও বেড়ে যাবে। এজন্য দ্রুত সরকার ঘোষিত প্রণোদনার অর্থ ছাড় করার জন্য ব্যাংক গুলোকে সহযোগী উদ্যোগী হওয়ার জন্য সরকারী নির্দেশনা দাবী করে ব্যবসায়ীরা। আর এ স্ক্র্যাপ শিপ মালিক ব্যবসায়ীদের প্রণোদনার অর্থ এ মূহুর্তে না দিলে সরকার প্রায় এক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হবে। সরকারী অনুদান সমূহের পাশাপাশি তফসিলী ব্যাংক গুলো স্বাভাবিক লাভের ভিত্তিতে ব্যবসা কার্যক্রম সমূহকে সহায়তা করতে পারে।সরকার সহযোগীতার ঘোষনা দিলেও ব্যাংক গুলোর মধ্যে বোঝাপড়া ও সহযোগীতার ঘাটতি আছে।কারণ ব্যাংকের শাখা গুলো এখনো এসব নির্দেশনা সম্পর্কে অবহিত নয়। তাছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকলেও ব্যাংকের হেড অফিস থেকে শাখা গুলো নির্দেশনা পায়নি।


এব্যাপার বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স রি-সাইক্লিন এসোসিয়েশনের সভাপতি মো তাহের বর্তমান স্ক্র্যাপ শিপ ব্যবসায়ী মালিকদের দৈন্যদশার কথা স্বীকার করে বলেন, সরকার ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা সমূহ বাস্তব অবস্হার নিরিখে বণ্টনপূর্বক স্ক্র্যাপশিপ ব্যবসায়ীদের সফল ভাবে ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ প্রদান অত্যন্ত জরুরী।

সাংবাদিক
দৈনিক ইত্তেফাক
সীতাকুণ্ড




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *