মীর দিদার হোসেন টুটুল :: পুরো বিশ্বে পড়েছে করোনার প্রভাব। তবুও কমছে না ক্ষুদ্রঋণে কিস্তির চাপ। করোনা পরিস্থিতির কারণে সারাদেশে এনজিও ঋণের কিস্তির ৬ মাসের জন্য শিথিল করেছে ক্ষুদ্রঋণের নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ)। কিন্তু এই নির্দেশনা কার্যকারিতার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না কর্ণফুলীতে।
বিভিন্ন ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারি ও অন্যান্য এনজিওগুলো যেমন-ব্রাক, আশা, ব্যুরো বাংলাদেশ, পদক্ষেপ, কোডেক, পল্লী কর্মস্থান সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসপি) ইত্যাদি সংস্থাগুলো তাদের ক্ষুদ্রঋণের কিস্তি আদায়ে চাপ শুরু করে দিয়েছে।
দেশে মহাদূর্যোগ মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এনজিওদের কিস্তি আদায় বন্ধ করে দিলে স্বল্পো আয় ও দিন মজুর মানুষের মধ্যে স্বস্হি ফিরে আসে। কারণ লক ডাউনের মধ্যে তারা কর্মহীন হয়ে পড়ে।এখনো তারা কর্মহীন অবস্হায় কেউ না খেয়ে,কেউ অর্ধাহারে দিন অতিবাহিত করে।কিন্তু রক্ত পিপাসু বহু গুনে সুদ আদায়কারী এনজিও গুলো এই লক ডাউনের মধ্যে তারা কিস্তি আদায় করার জন্য বাড়ী বাড়ী গিশে কর্মহীন সদস্যদেরকে দুঃচিন্তার মধ্যে ফেলে দেয়।
এনজিওগুলো তাদের সাপ্তাহিক ও মাসিক ঋণ (কিস্তি) আদায় চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এতে বিপাকে পড়েছে উপজেলার নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষেরা। লকডাউনে যেখানে তিন বেলা খাবারের রসদ যোগাতে সমস্যায়, সেখানে কিস্তি আদায় করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
অথচ এসব এনজিওদের এমআরএ নির্দেশনা প্রদান করেছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় রেখে দরিদ্র জনগোষ্ঠির মাঝে জরুরী খাদ্য বিতরণ করার। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সীতাকুণ্ডের এনজিও কাউকেই জরুরী খাদ্য সহায়তা দিতে কিংবা উপজেলা প্রশাসনকে তাদের খাদ্য বিতরণ কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। অথচ সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা এনজিও ও সুদ কারবারিরা কিস্তির জন্য চাপ দেওয়া শুরু করেছে। অনেকে করোনাকালীন সময় উপক্ষো করে ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের আবার অফিসকে ডাকছেন।
মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি কতৃক ৩০ জুন পর্যন্ত কিস্তি শিথিল করার সার্কুলার
মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) বলেছেন, আগামী জুন পর্যন্ত ঋণগ্রহীতা কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে সেটিকে খেলাপি বলে শ্রেণীকরণ করা যাবে না। কিন্তু এই দুঃসময়েও হতদরিদ্রদের কিস্তির বোঝা কমছে না।
করোনা পরিস্থিতিতে, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, বেশির ভাগ ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধের পথে, দুঘন্টা করে চলছে ব্যাংক, এরইমাঝে এনজিও ও সুদ কারবারিদের কিস্তি আদায়ে চাপ কতটা যুক্তিসঙ্গত; প্রশ্ন থাকে। কেনোনা করোনা প্রভাবে মানুষের ব্যবসা বাণিজ্য মন্দ। সাধারণ মানুষ দিশেহারা। আতঙ্কে মানুষ পাড়া মহল্লায় বের হতে চায় না। সাধারণ মানুষও আগের মতো চলাফেরা করে না। এনজিও’র ঋণের জালে জড়িত মানুষেরা এসময় বিপাকে। এমনকি ঋণ নিয়ে নিজেদের ভাগ্যবদল চেষ্টাকারী ব্যক্তিরা বর্তমান প্রেক্ষাপটে কিস্তি তোলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে অভিজ্ঞ মহলের অভিমত, এই মূহুর্তে কিস্তি আদায় করা মানে কর্মহীন মানুষের গলায় ছুরি বসানো। যদি কিস্তি আদায় করতে হয়, তাহলে লক ডাউন শেষ হওয়ার অন্তত ২ মাস পর কিস্তি আদায় করতে হবে। তখন এই কর্মহীন এনজিও সদস্যদের কিস্তি আদায় করতে বেগ পেতে হবে না।
সুতরাং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবী, অতিদ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এনজিওদের কিস্তি আদায় করা বন্ধ করে কর্মহীন সদস্যদেরকে আতংক থেকে বাঁচানো।